ইসরায়েল সোমবার গাজা উপত্যকায় ভারী বোমা হামলা চালিয়েছিল। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো তেল আবিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, দেশটি তার আক্রমণের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখছে।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি নজিরবিহীন হামলা চালায়। সর্বশেষ ইসরায়েলি পরিসংখ্যান অনুসারে, এক হাজার ১৩৯ জন সেই হামলায় নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশ বেসামরিক নাগরিক।
অন্যদিকে হামলার জবাবে হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে ইসরায়েল স্থল অভিযানের পাশাপাশি গাজায় নিরলস বোমাবর্ষণ করছে। অঞ্চলটির হামাস সরকারের মতে, এতে ১৮ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশ নারী এবং শিশু।
যুদ্ধের ৭৩তম দিনের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য খবর :
গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা অব্যাহত
ইসরায়েল সোমবার গাজা উপত্যকায় তার ভারী বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।
এ ছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী আল-ফারা শরণার্থীশিবিরে চার ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ৩০০ পেরিয়েছে।
বেসামরিকদের অনাহারে রাখা যুদ্ধের পদ্ধতি : এইচআরডাব্লিউ
অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আক্রমণের অংশ হিসেবে ইসরায়েলি সরকার গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রাখার অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)।
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক এইচআরডাব্লিউ একটি প্রতিবেদনে ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে বলেছে, ‘ইসরায়েল সরকার অধিকৃত গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে বেসামরিকদের অনাহারে রাখছে, যা একটি যুদ্ধাপরাধ।’
মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে পানি, খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহে বাধা দিচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে মানবিক সহায়তায় বাধা সৃষ্টি করছে। স্পষ্টতই কৃষি এলাকা ধ্বংস করছে এবং বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে তাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য বস্তু থেকে বঞ্চিত করছে।
ইসরায়েলি সরকার এইচআরডাব্লিউকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী ও ইসরায়েলবিরোধী সংগঠন’ বলে অভিযুক্ত করেছে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘মানুষ যদি ক্ষুধা, রোগ, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সংমিশ্রণে মারা যেতে শুরু করে তবে তিনি অবাক হবেন না।’
যুদ্ধবিরতির আহ্বানে জাতিসংঘের ভোট
গাজায় ‘জরুরি ও টেকসই শত্রুতা বন্ধের’ আহ্বান জানিয়ে একটি নতুন প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি)।
বৃহত্তর সাধারণ পরিষদ যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে ভোট দিলেও ওয়াশিংটন আগে ইউএনএসসির অনুরূপ প্রস্তাবগুলোতে ভেটো দিয়েছিল। ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫৩টি দেশ পক্ষে ভোট দিয়েছে।
লেবানন সীমান্ত শান্ত করার চেষ্টায় ফ্রান্স
ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননের সীমান্তে প্রায় প্রতিদিন গোলাগুলি চলছে। এতে সর্বাত্মক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের শীর্ষ কূটনীতিক সংঘর্ষ কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনার জন্য সোমবার লেবাননে গেছেন।
লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি এবং ইরান সমর্থিত শক্তিশালী সামরিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান মিত্র সংসদের স্পিকার নাবিহ বেরির সঙ্গে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা তাঁর বৈঠকে দায়িত্ব ও সংযমের আহ্বান জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
লোহিত সাগর এড়াবে ব্রিটিশ জ্বালানি জায়ান্ট
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েলকে চাপ দিতে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করছে। এ পরিস্থিতিতে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট স্থগিত করার জন্য ব্রিটিশ জ্বালানি জায়ান্ট বিপি অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
সূত্র : এএফপি