[t4b-ticker]

 

✍️সুনির্মল সেন:
স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে দেশের প্রতিটি নাগরিকের। কিন্ত এ ব্যাপারে প্রশ্ন ওঠেছে, সবাই কি চিকিৎসকদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে! জন-মানবের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষে বিভিন্ন সময়ে সরকার সাধারণ জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এবং এ ব্যপারে নানান পদক্ষেপও নিয়েছেন। তবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যতটুকু হওয়ার কথা ততোটুকু হয়নি।

সরকার চিকিৎসকদের গ্রামের হাসপাতালে কাজ করতে বলেছেন। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, যে সব চিকিৎসকদের গ্রামে যেতে ইচ্ছে করে না, তাদের চাকুরি করার দরকার নেই। ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর তৎকালীন মাননীয় রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান একটি অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরীক্ষা -নিরীক্ষা না করার জন্য আহবান জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মাননীয় রাষ্ট্রপতি এড.আব্দুল হামিদ আগের রাষ্ট্রপতির আহবান পুনরায় ব্যক্ত করেছিলেন। মাননীয় রাষ্ট্রপতিদের সময়োচিত সেই আহবানে চিকিৎসক কিংবা ডাক্তাররা কর্ণপাত করেনি। বরং ক্রমশ তা বেড়েই যাচ্ছে।

সারাদেশের ন্যায় সিলেট বিভাগের গ্রাম-গঞ্জ, পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে ক্লিনিক -প্যাথলজি সেন্টার। তারা নিয়োগ দিচ্ছে দালাল। এই দালালরা কন্টাক করছে চিকিৎসকদের সাথে। ৫০% থেকে ৬০% পর্যন্ত টেষ্টের বিল চিকিৎসকদের ঘুষ দেবার পদ্ধতি চালু হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্হ দেশ বলেই হয়তো সরকারের নাকের ডগায় এসব অপতৎপরতা চললেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যপারে একেবারে নিশ্চুপ!
চিকিৎসকদের এই পরীক্ষা -নিরীক্ষা কিংবা টেষ্ট ব্যবসা এখন সয়াবিন তৈল বা ডাল, চিনি সিন্ডিকেটের মতই নাগরিক জীবনে একটি নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সমাজে প্রভাবশালী এবং সবচেয়ে সম্মানিত শ্রেণীর মানুষ গুলোর অর্থ লিপ্সা কতোটা নীচে গিয়ে নেমেছে তা বোঝা যায় এই টেষ্ট ব্যবসা কিংবা পরীক্ষা বাণিজ্য দ্বারা। মানবিকতার লেস মাত্র থাকলে হয়তো তারা অহেতুত টেষ্ট বাণিজ্য হতে বেরুতে পারতেন। কমিশন প্রথা না থাকলে হয়তো শুধু মাত্র প্রয়োজনীয় টেস্টগুলো করার জন্যই ডাক্তাররা উপদেশ দিতো বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। সেবা হয়ে গেছে এখন ব্যবসা। সাবান তেলের পাশাপাশি ক্লিনিক গুলোর ও বিজ্ঞাপন পত্রিকা-টিভি চ্যানেলে প্রচার হয়। ঝকঝকে তকতকে মার্বেল পাথরে সজ্জিত এসব ক্লিনিকে গেলে রোগী সুস্থ হোক বা না হোক তার পরিবারকে অর্থনৈতিক ভাবে অসুস্থ্য করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া চিকিৎসকদের চেম্বারে ৫০০/ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা ভিজিট নেবার পরও রোগীদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়না বলে অভিযোগ করেন অনেক রোগী। কিছু কিছু ব্যস্ত চিকিৎসকগণ রোগীর সমস্যার কথা ভাল করে শোনার সময়ও পায়না।

ইদানিং পট কোম্পানি বলে কিছু ভূঁইফোড় কোম্পানি বেরিয়েছে। যারা চিকিৎসকদের সাথে মাসোহারা চুক্তি করে মানহীন ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ট্যাবলেট লিখে থাকেন। এক পটের দাম ৩০০ টাকা থেকে ৫০০/৬০০ টাকা পর্যন্ত! এই মানহীন বেনামি কোম্পানির ঔষধ লিখে চিকিৎসকগণ কিছু কামিয়ে নিলেও এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী রোগী সাধারণ নিরবে প্রতারিত হয়। উচ্চ শিক্ষিত এই সব চিকিৎসক নামক মানুষেদের কাছে সমাজ, রাষ্ট্র যা কখনোই প্রত্যাশা করে না। এ ছাড়াও নামী কোম্পানি গুলোও নানান অসাধু প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। তারা মেডিসিনের দাম বাড়াচ্ছে অযৌক্তিক হারে। সরকার নির্বিকার কেনো না এইসব বড় কোম্পানীগুলোই রাজনৈতিক দলের ডোনার!

এ ছাড়াও প্রতিবছর বাজেটে স্বাস্থ্যসেবার জন্য যে বরাদ্দ সরকার রাখে,তার অর্ধেকও জনগণের কল্যাণে ব্যায় হয় না।সরকারি হাসপাতালের বেতন ভুক্ত চিকিৎসকগণ নিয়মিত অফিসে আসেন না।আর সরকারি ঔষধও ঠিকমত বন্টন করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে। সরকারি হাসপাতাল গুলোর নানা অনিয়ম ও নাজুক অবস্থা নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং স্যাটেলাইট চ্যানেলে সংবাদ প্রচার হয়। কিন্তু তাতে বিশেষ কোন উন্নতি চোখে পড়েনি।

তবে এতো কিছুর পরেও সমাজ সব চিকিৎসকই অর্থের পেছনে ছুটছে এটা বলা অন্যায়। অনেক ভালো মনের চিকিৎসক রয়েছেন, যারা দুস্থদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকেন। ফ্রি স্যাম্পল পাওয়া ঔষধ গরীব রোগীদের মাঝে বন্টন করে দেন। টাকা নয়-তারা মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে কাজ করেন। যারা রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য তাদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে থাকেন।

আশা করছি-আমাদের প্রিয় চিকিৎসকগণ তাদের চিকিৎসা সনদ পাওয়ার সময়, যে শপথ নিয়ে চিকিৎসা পেশায় নিজেদের নাম লিখান, সেই কথাগুলো স্মরণ করে আগামী দিনে রোগীদের সেবায় আত্ননিয়োগ করবেন। অসহায় মানুষগুলোর প্রতি দয়া করে সদয় হোন আপনারা।
( কবি ও সিনিয়র সাংবাদিক)