অনলাইন ডেস্কঃ
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের সদর ইউনিয়নের শুক্রীবাড়ির বাসিন্দা শাজমান মিয়ার কন্যা লাইলী আক্তার (৩৬)। পাঁচ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় অনেকটাই বাক প্রতিবন্ধী লাইলী আক্তারকে দরিদ্র পিতা অনেকটা কষ্ট করে প্রায় পনের বছর আগে একই ইউনিয়নের বিরাট গ্রামের নাভলু মিয়ার কাছে বিয়ে দেন। বিয়ের পর বছর সাতেক ভালই চলছিলো লাইলীর সংসার । এরই মধ্যে একে একে তিন কন্যা সন্তানের মা হন লাইলী। লাইলীর বড় মেয়ের বয়স এখন প্রায় ১৪ বছরের কাছাকাছি।
কিন্তু বছর আটেক আগে হঠাৎ করে আবারও বিয়ে করেন নাভলু মিয়া । এতেই মাথা গোঁজার ঠাই হারানোর দিন শুরু হয় লাইলীর। রাগ করে কয়েকদিন ভাইয়ের কাছে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন লাইলী। কিছুদিন পর লাইলী আর নাভলুর সংসারের ঝামেলা মিটাতে একাধিক বার স্থানীয় মুরব্বীরা শালিশ করেও ব্যর্থ হন। তারপর আর নাভলুর সংসারে ঠাঁই হয়নি লাইলীর। সেই থেকে বিরাট গ্রামে একেক জনের বসত ভিটায় একেক সময় তিন মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন লাইলী। অভাবের তাড়নায় মেয়েদের মুখে দু‘বেলা খাবার তুলে দিতে কাজ করছেন দিনমজুর হিসেবে। বর্তমানে তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)র আরইএআর এমপি প্রকল্পে কাজ করছেন। বড় মেয়ে ঢাকায় গৃহকর্মীর আর সবার ছোট মেয়ে স্থানীয় একজনের বাসায় বাচ্চা দেখাশুনার কাজ করেন। তিনজনের সেই কাজে মাসে যা ইনকাম হয় তা দিয়ে কোনরকমে চলে সংসার। অভাবের তাড়নায় তিন মেয়ের কাউকেই ভর্তি করতে পারেননি স্কুলে।
লাইলীর এখন একটাই চাওয়া নিজের তিন সন্তানকে নিয়ে নিজের একটি মাথা গোঁজার ঠাই খোঁজা। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দেয়ার বিষয়টি জানার পর তিনবার আবেদন করেছিলেন তিনি। আবেদনের পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরজমিনে যাচাই বাচাই করা হলেও অদৃশ্য কোন কারণে তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় লাইলীর নাম।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কথা হয় লাইলীর সাথে, কথা বলতে পারলেও অনেকটাই অস্পষ্ট তার ভাষা। সেই অস্পষ্ট ভাষায় জানালেন নিজের নীড়ের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাপের কথা ।
লাইলী জানান, সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহ ও ভুমিহীনদের ঘর দিচ্ছে বিষয়টি জানার পর তিনবার আবেদন করেছেন তিনি। সর্বশেষ চতুর্থ পর্যায়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেতে আবেদন করার পর সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ যাচাই বাচাইয়ের জন্য লাইলীর অস্থায়ী ঠিকানায় গিয়ে যাচাই বাচাই করেন। কিন্তু তালিকা প্রকাশের পর জানতে পারেন আশ্রয়নের সেই তালিকায় নেই লাইলীর নাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সুফল মিয়া জানান, লাইলী আক্তার তিনটি মেয়ে নিয়ে আসলেই অসহায়। একেক মানুষের বাড়িতে একেক সময় বাস করেন। শুনেছি তালিকা যাচাই বাচাইয়ের জন্য লাইলীর অস্থায়ী বসবাসের জায়গায় অফিস থেকে সরজমিন তদন্তও করা হয়েছে। কিন্তু কি কারনে তালিকা থেকে বাদ পড়লো তা জানিনা।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আশরাফুল ইসলাম মোবারুল বলেন, কি কারনে তালিকা থেকে লাইলী আক্তারের নাম বাদ পড়েছে সেটা জানিনা। তবে অসহায় লাইলী আক্তারের ঘর পাওয়ার বিষয়ে যতটুকু সহযোগীতা প্রয়োজন তা আমরা করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন , চতুর্থধাপে আশ্রয়ণ প্রকল্পের যাচাই বাচাইয়ের তালিকা আমি যোগদানের পুর্বেই সমাপ্ত করা হয়েছে। লাইলী আক্তার সহ এমন অনেকেই এখনও বাকি রয়েছেন। পরবর্তীতে আবারও ঘরের বরাদ্ধ আসলে আমরা তাদের নাম তালিকাভুক্ত করে তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরের ব্যবস্থা করে দিবো।