[t4b-ticker]

সুনির্মল সেন :

হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতি ঘেরা বাংলাদেশ। হাওর-বাওর, আউল-বাউল আর মরমি কবিদের চারণভূমি হিসেবে খ্যাত এই বাংলাদেশ।

এখানে সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, ধলাই, ধনু, কালণী, মগরা, মনু, মহাসিং, সুরমা সহ নাম না জানা প্রভৃতি নদী বহে চলেছে। আর এই নদীর পাশেই রয়েছেন — ধামাইল সম্রাট রাধারমন দত্ত, হাসনরাজা, শীতালং শাহ, দুর্ব্বিন শাহ, রকিব শাহ, আরকুম শাহ, শেখ ভানু, সৈয়দ শাহনুর, জব্বার শাহ, আজি শাহ, তারা শাহ, বলন শাহ, খেতা শাহ, বিপ্লবী বাউল শাহ আব্দুল করিম সহ অসংখ্য গুণী মানুষ– মনীষী সমতুল্য শিল্পী। যাদের জন্মগ্রহণে এই হাওর-বাওড় ঘেরা বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে নন্দিত।

সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগন্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, সিলেট। এই ৭টি জেলার সিংহভাগ এলাকা হাওর–বাওর ঘেরা। নদীমাতৃক এই অঞ্চলকে ভাটি বাংলা বলে অনেকে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে
দেশের উত্তর পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল। কথায় আছে –”ধানের দেশ আর বানের দেশ, ওইটি যে ভাই ভাটির দেশ।”

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাওরবাসির কল্যাণে গঠন করেছিলেন –” হাওর উন্নয়ন বোর্ড”। এখন তার সাথে নদী গবেষণা ও হাওর অর্থনীতি সমীক্ষা চালু করা হয়েছে। এতো কিছুর পরও হাওরের উন্নয়ন হচ্ছে খুব ধীরগতিতে। কৃষি প্রধান এই দেশ, বাংলাদেশ । একমাত্র কৃষিই আমাদের জাতীয় মূল চালিকা শক্তি। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এ ক্ষেত্রে কৃষকের উন্নয়ন হচ্ছে মন্তরগতিতে । ইতোপূর্বের সরকার থেকে শুরু করে বর্তমান সরকার পর্যন্ত কৃষি খাতে মোটা অংকের ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কৃষকের দুর্ভাগ্য, ওই ভর্তুকির টাকার সুফল কৃষক ভোগ করতে পারেনি।

সরকার আসেন সরকার যান, কিন্তু কৃষকের ভাগ্যের চাকা আর পরিবর্তন হয়না। একদিকে বিশ্বায়ন, অন্যদিকে বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে হাওর অঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায় কৃত্রিম সংকট। ফলে ওই সব এলাকার অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার দরুণ কৃষক আবাদ করতে পারেনা। অপরদিকে নদী–নালা, খাল–বিল ভরাট হচ্ছে। নাব্যতা হারিয়ে অনেক নদী মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী–দেশরত্ন শেখ হাসিনা,আপনার সরকার এসে ২০ বছর মেয়াদি হাওর মহাপরিকল্পনা করেছেন। এই জন্য সমগ্র হাওরবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচছা। আপনাকে জানাতে হয়, আমাদের ভাটি অঞ্চলের মানুষ প্রায়ই প্রকৃতির সাথে লড়াই করে তাদের জীবন-জীবিকা চালিয়ে যাচ্ছে। একমাত্র আপনি-ই পারেন এই ভাটি অঞ্চলের ‘প্রায় তিন কোটি মানুষের ভাগ্যের’ পরিবর্তন ঘটাতে।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিশাল জনপদের তিন কোটি মানুষ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। ইতোমধ্যে হাওর অঞ্চলের রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন মুলক বেশ কিছু কর্মকান্ড আপনার সরকার করতে পেরেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সেবা হতে হাওর অঞ্চলের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী বঞ্চিত। আমরা সিলেট তথা হাওর অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠী আশাবাদি। আপনার বর্তমান সরকারের আমলেই ডিজিটাল ভাটি বাংলা পূর্ণরূপ পাবে, এ ব্যাপারে আমরা দারুনভাবে আশাবাদি। এই জন্য চাই আপনার কাছে   গঠনমূলক  রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত।

( কবি ও সাংবাদিক)