অনলাইন ডেস্ক:
বাড়ির কাছে আরশি নগর/সেথা পড়শি… একদিনও না দেখিলাম তারে—লালন সাঁইয়ের এই বিখ্যাত গানের মতোই সম্প্রতি সন্ধান পাওয়া সম্ভাব্য বাসযোগ্য গ্রহের দূরত্ব ‘মাত্র’ ৪০ আলোকবর্ষ! সাধক যেমন তার পড়শির দেখা পাননি, তেমনি নতুন এ গ্রহে পৌঁছানো সম্ভব কি না, তা নিয়েও রয়েছে বিস্তর শঙ্কা! কারণ এক আলোকবর্ষ মানে ৯৪৬ হাজার কোটি কিলোমিটার। তাই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির উড়োযানটির সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ৩ লাখ বছর। তা কি এক জীবনে সম্ভব!
বিজ্ঞানীরাও তেমনটাই বলছেন। এ গবেষণায় যুক্ত ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার পিএইচডি শিক্ষার্থী ল্যারিসা প্যালেথর্পের মতে, বর্তমানে সেখানে যেতেও আমাদের সবচেয়ে দ্রুতগতির স্পেসশিপটির প্রায় তিন লাখ বছর সময় লাগবে। আর গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ডের জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার পিএইচডি শিক্ষার্থী শিশির ঢোলাকিয়া বলেন, এটি প্রায় ৪০ আলোকবর্ষ দূরে; এর মানে এই নয় যে অদূর ভবিষ্যতে যে কোনো সময় এটাতে পৌঁছতে পারি; তবে এর মানে এই যে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম স্পেস টেলিস্কোপগুলোকে এটিতে ব্যবহার করতে পারি এবং বুঝতে পারি এর বায়ুমণ্ডল কেমন হতে পারে। আর নাসা বলছে, এখন জ্যামস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে ‘গ্লিস ১২বি’ নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে।
গত শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪০ আলোকবর্ষ দূরে সন্ধান পাওয়া পৃথিবীর প্রায় সমান আকৃতির সম্ভাব্য বাসযোগ্য এ গ্রহের নাম দেওয়া হয়েছে ‘গ্লিস ১২বি’। নতুন গ্রহটির তাপমাত্রা প্রায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যার মানে বাসযোগ্য হতে পারে এটি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এতে মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব।
গ্লিস ১২বি গ্রহ অনুসন্ধানের এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন কুইন্সল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডভিত্তিক পিএইচডির শিক্ষার্থীরা। যাদের গবেষণাটি রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত হয়েছে।
শিশির ওই গ্রহের সন্ধান পাওয়ার মুহূর্তকে ‘ইউরেকা মোমেন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা হিসাব কষে দেখেছি এটির আকৃতি পৃথিবীর কাছাকাছি; সম্ভবত তাপমাত্রাও। এটি সত্যি কিছুটা ঠান্ডা।
তিনি আরও বলেন, এর ভূপৃষ্ঠে তরল জলাধার থাকার জন্য এটাই সঠিক তাপমাত্রা হবে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি সেখানে পানির অস্তিত্ব থাকলে এ গ্রহ সম্ভবত বাসযোগ্য হবে। জীবনের অস্তিত্বের জন্য আমরা এমন গ্রহ খুঁজছি যেগুলো সম্ভাব্য বাসযোগ্য হবে।
তিনি বলেন, গ্লিস ১২বি সম্ভবত পৃথিবীর আকারের সমান বা সামান্য ছোট হবে বা ভেনাসের মতো। রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি বলছে, গ্রহটি মীন রাশিতে অবস্থিত। এটি একটি শীতল রেড ডোয়ার্ফ নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। সম্ভবত এতে বায়ুমণ্ডল নেই।
গবেষক ল্যারিসা প্যালেথর্প বলেন, এটি মানুষের জন্য অস্বস্তিকর হলেও যেভাবে আমরা বাসযোগ্যতার বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করি, তা হলো গ্রহের পৃষ্ঠে তরল পানির উপস্থিতি, যা এ নতুন গ্রহটিতে থাকতে পারে।
প্যালেথর্প ও গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের এক গবেষণা দল যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট’ বা ‘টিইএসএস’ নামে পরিচিত স্যাটেলাইটটিকে ব্যবহার করে তারা প্রদক্ষিণকারী নতুন এ গ্রহটিকে শনাক্ত করেছেন। নতুন গ্রহটির আকার, তাপমাত্রা ও এটি কীভাবে চলাচল করে, তা হিসাব করতে গবেষকদের এক বছরেরও কম সময় লেগেছে।
প্যালেথর্প বলেন, এত কাছাকাছি দূরত্বে গ্রহটিকে শনাক্ত করা সত্যিই রোমাঞ্চকর। কারণ, এটি আমাদের বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে সহায়ক হবে, ফলে আমরা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে আরও অনেক কিছু শিখতে পারব।
জেএইচ: