সুনির্মল সেনঃ
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দূর্যকাপন গ্রামে একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আলী হায়দারের সন্তান প্রতিবন্ধী আবুল বাশার তুহিনের পরিবারের স্ত্রী, যুবতী মেয়ে—ছেলেসহ অন্যান্য সদস্যদের উপর একাত্তরের পরাজিত শত্রু পশ্চিম পাকিস্তানীদের কায়দায় হামলা, বসত—বাড়ী জ্বালিয়ে দেওয়া, লুট—পাঠসহ শিশু ও নারী নিযার্তনের মতো ঘটনা ঘটেছে।
এমন পৈচাশিক ঘটনা পাকিস্তানীদেরকেও হার মানিয়েছে বলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের নিযার্তিত দুই সদস্য যথাক্রমে প্রতিবন্ধি আবুল বাশার তুহিন ও তার স্ত্রী ছমিরুন বেগমের বক্তব্যে উঠে এসেছে। এমন ঘটনা ঘটেছে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুই দিন পর। আসামী পক্ষ পূর্ব শত্রুতার জিগিসা চরিত্রার্থ করতে এই সময়টা বেছে নিয়েছিল বলে কান্না জাড়িত কন্ঠে তারা এ প্রতিনিধিকে এ ঘটনার কথা বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সেদিনের ঘটনাটি ঘটেছে — ৭ই আগস্ট রাত সাড়ে বারোটায় লন্ডন প্রবাসী অধ্যূষিত অঞ্চল সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দূর্যকাপন গ্রামে। যখন সকল মানুষ ঘুমে বিভোর ও শেখ হাসিনার সরকারের পতনে প্রশাসন নাই বল্লেই চলে। তখন তারা ঘটনার দিন হামলাকারীদের হাতে নির্যাতিত হয়ে প্রথমে সিলেট নগরীর রিকাবী বাজারস্থ সেনাবাহিনীর কাছে এসে ঘটনাটি খুলে বলেন। সেখানে কর্তব্যরত সেনা কর্মকতা তাদেরকে চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেলে যাওয়ার পরামর্শ দেন।পরবর্তীতে ব্যপারটি দেখবেন বলে তারা আসস্থ্য করেন। আওয়ামী সরকার পতনের কারণে সে—সময় দেশে কোন প্রশাসন তেমন না থাকায় ওই সময় কোন মামলা তারা করতে পারেন নাই বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যপারে নিযার্তিত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ছমিরুন বেগম বাদী হয়ে গত ২২ আগস্ট সিলেটের মাননীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর—৪৬৭, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী—২০০৩) এর ৯(৪) (খ) / ৩০ ধারা।
মামলায় বিবাদী করা হয়েছে— সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দুর্যাকাপন গ্রামের (১) বিল্লাল পিতা—মৃত তোরন আলী, (২) রিপন পিতা— জিলু মিয়া, (৩) শায়েস্থা পিতা— আকলুছ আলী, (৪) নোমান পিতা—আমজান মিয়া, (৫) কাওছার পিতা— চন্দন মিয়া।
উক্ত মামলায় বাদী—ন্যায় ও সুবিচারের স্বার্থে চরিত্রহীন, লম্পট, ধর্ষনের চেষ্টাকারী আসামীগণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করিতে মাননীয় আদালতের কাছে সুবিচার কামনা করেছেন।
অপর আরেকটি মামলায় একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আলী হায়দারের সন্তান প্রতিবন্ধী আবুল বাশার তুহিন গত ১৯ আগস্ট সিলেটের মাননীয় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ৩ এ ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩০৭/৩৫৪/৩৭৯/৪৩৬/
৫০৬/৩ ধারায় একটি দরখাস্থ মামলা দাখিল করেছেন (সি আর ২৪৯/২২৪ বিশ্বনাথ)।
মামলায় বিবাদী করা হয়েছে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দূর্যকাপন গ্রামের রশিদ, রুপাই, রিপন, বিল্লাল, আসকন্দর, কাওসার, নোমান, মনুমিয়া, চন্দন মিয়া, আনসার মিয়া, ছালিক মোল্লা, রুজেল, সুহেল, সালাম নামসহ আরো ২০/৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
এদিকে, সিলেটের মাননীয় আদালত বাদীর দরখাস্থ মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ সুপার, পিবিআই, সিলেটকে আগামী ৩ অক্টোবরের ভিতর এই ঘটনা তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
নিযার্তিত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার জানিয়েছেন, তাদের বসত ভিটা এখন পর্যন্ত আসামীদের দখলে রয়েছে। ঘটনার দিন (০৭ আগস্ট) রাত সাড়ে বারোটার পর ২০/৩০ জনের মতো সন্ত্রাসীরা তাদের পরিবারের শিশু সহ কলেজ পড়ুয়া যুবতী মেয়েদের উপর পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতন করেছে।
তারা আরো জানায়— মামলা করার পর আইন—শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যরা এখন পর্যন্ত তাদের পাশে না দাঁড়ানোর কারণে তারা নিরাপত্তায় ভোগছেন। তাদের জানমাল নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের সুনজর কামনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা।
Shuvo