[t4b-ticker]

অনলাইন ডেস্কঃ

রাজধানীর আদাবরে নবোদয় হাউজিং এলাকায় নবোদয় কাঁচাবাজারের পাশেই ৬ নম্বর রোড। সেখানে ছোট একটি টিনের ঘরে বসবাস আক্তার হোসেন ও মিতু বেগম দম্পতির। কয়েকদিন আগেই তাদের কোল আলো করে এসেছিল এক শিশু। কিন্তু মাদক কারবারিদের নির্মমতায় আজ সেই ঘরে শোকের ছায়া। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাদক কারবারিদের হামলায় আহত হয় মায়ের কোলে থাকা কবির হোসেন নামে ২০ দিন বয়সী শিশুটি। গতকাল বুধবার ভোরে সে মারা যায়। এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা ৯ জনকে আসামি করে আদাবর থানায় মামলা করেছেন। এরপর ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে আক্তার হোসেনের বাসার সামনে তার বড় ছেলে ফয়সাল পাশের বাসার আরেক ছেলের সঙ্গে খেলা করছিল। এ সময় ওই দুই শিশুর মধ্যে খেলা নিয়ে ঝগড়া হয়। এর পর ওই ছেলের পক্ষ হয়ে তার মামা মাদক ব্যবসায়ী হীরা এসে নিহত শিশুটির বোন মনিকে প্রথমে আঘাত করে। ঝগড়া বাড়তে থাকলে ২০ দিনের শিশু কবির হোসেনকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন তার মা মিতু বেগম। এ সময় হীরা ও তার চার বোন মিতু বেগমের ওপর হামলা চালায়। মিতুর কোলে থাকা শিশু কবিরের মুখেও এলোপাতাড়ি কিল-ঘুসি দেয়। এতে মিতু ও তার শিশু দুজনই মাটিতে পড়ে যায়। এর পরও তারা সবাইকে মারধর করতে থাকে।

এলাকাবাসী জানায়, হীরা ওই এলাকায় চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ী। সে এলাকায় কিশোর গ্যাংও চালায়। তাদের পরিবারের সবাই এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এজন্য হামলার সময় তাদের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।

গতকাল বুধবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায় বাসার সামনে বসে বিলাপ করছেন নিহত শিশুর মা মিতু বেগম। প্রতিবেশীরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মিতু বলেন, ‘আমাদের ওপর হামলার পর সঙ্গে সঙ্গে থানায় গেলে পুলিশ আমাদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলে। আমরা মেডিকেল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এসে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে রাত প্রায় সাড়ে ১২টায় বাসায় ফিরি। রাতে আমার কোলের শিশুকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়াই। কিন্তু ভোর ৪টার দিকে আবার দুধ খাওয়ানোর জন্য তুলতে গিয়ে দেখি, আমার ছেলে নড়াচড়া করছে না। আমি চিৎকার দিলে সবাই ঘুম থেকে উঠে যায়। তখন দেখি আমার বুকের ধন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আর বেঁচে নেই। আমার ছোট্ট শিশুসন্তানটির মরদেহটি নড়াচড়া দিলেই তার

নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। মাদক ব্যবসায়ীরা আমার শিশুটিকে এভাবে মেরে ফেলল। আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই।’

শিশুটির বাবা আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি কিশোরগঞ্জ। আমি রিকশা চালাই। যারা আমার বাচ্চাকে মেরেছে তারা সবাই মাদক কারবারি। আমি আমার শিশু হত্যার বিচার চাই।’

আদাবর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, ভোরে ঘটনা জানার পর আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। নিহত শিশুটির বাবা ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

FA