সুনির্মল সেন :
কোন এক জমিদারের ‘মোসাহেব’ ছিল। জমিদার একদিন মোসাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন — আলু কি ধরনের জিনিস বলতো? মোসাহেবটি খুব আঁকুপাঁকু হয়ে হাত জোড় করে বললো–“হুজুর আপনার মুখেই শুনতে চাই?” তখন জমিদার বললেন ‘আলু আজকের বিশ্ব দুনিয়ার একটি উপাদেয় খাদ্য, এই খাদ্য সকল তরি-তরকারিতেও লাগে।” কথা শেষ না হতেই মোসাহেবটি বলতে লাগলো —
‘আজ্ঞে হুজুর! উপাদেয় খাদ্য বলে কথা! অতি উপাদেয়, মহা উপাদেয়! কথায় বলে গোল আলু –ভাতে দিন, সিদ্ধ করুন, ভাজুন, চচ্চড়িতে দিন, ঝোলে ঝালে টকে দমে ডালনায় কালিয়া কোপ্তায়–সবেতেই গোল আলু চলে! পৃথিবীতে এমন বস্তু কি আর আছে।” তখন জমিদার — ‘ তুই যাই বলিস আলু খেতে ভাল হলেও ওসব গরম জিনিস।” যখন মোসাহেবটি সাথে সাথে বলতে লাগল–” আজ্ঞে হ্যাঁ হুজুর গরম বলে গরম? মহাগরম, অতিগরম!
আজকাল হুজুর যে সব রোগ হচ্ছে পেট ফাঁপা, কলেরা, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া, থাইসিস্ – এসব ব্যাধির কারণ দেখছেন কি হুজুর! সব রোগের মূলে জানবেন– ঐ এক গোল আলু! ”
তারপর জমিদার বললেন– “আচ্ছা বেগুন সম্বন্ধে তোমার অভিমত কি?” মোসাহেব বলল–” আজ্ঞে হুজুর আপনিই বলুন না! জমিদার বললেন–বেগুন মন্দ কি? বেগুন ভাল তরকারি বলেই জানি! মোসাহেব তখন বলতে লাগল–” আজ্ঞে হুজুর! বেগুনের মতো কি আর কিছু আছে, দুইটা বেগুনের ভাজা পেলে আর কি চাই? মাখন কোথায় লাগে! ঘরে যদি আর কিছুই না থাকে, কেবল একটা বেগুন থাকলেই ভদ্রলোকের সম্মান রক্ষা হয়। পোড়ান, ভাজুন, রাঁধুন- সবেতেই বেগুন চলে। তার মধ্যেে লাফা বেগুন মহান মালিকের অপূর্ব সৃষ্টি।”
তখন জমিদার বললেন -“যা হোক বেগুনে পুষ্টিকর কিছু নেই।” তক্ষুনি মোসাহেব বলতে লাগল– ” আরে মালিক মালিক! হুজুর কথায় বলে ‘ বে-গুন।’ তার কোন গুণ থাকলে কি বেগুন কখনো নাম হত! একেবারে গোবর। গোবরেরও তেজ আছে কিন্তু বেগুন তার চেয়েও অধম। বেগুনের কপালে আগুন। তাই তো বেগুনকে পুড়িয়ে খেতে হয়। কচু–ওলের চেয়েও বেগুনে আরও দ্বিগুণ চুলকায়। এবার জমিদার মহোদয় বললেন–‘ তুমি তো দেখছি বেশ অদ্ভুত লোক হে। আমি যখন যা বলছি ‘ভাল’ তখন তুমি বলছ ‘খুব ভাল’ আমি যখন যা বলছি ‘মন্দ’ তুমি দেখাচ্ছ ‘অত্যাধিত মন্দ’, কি ব্যাপার? তোমার নিজের কি কোনও ব্যক্তিত্ব নেই।”
তখন মোসাহেবটি আঁকুপাঁকু হয়ে আবার হাত জোড় করে জমিদার মশাইকে বলতে লাগল, ” হুজুর, ক্ষমা করুন, মার্জনা করুন –সত্যিই বলতে কি, আমি তো আলু বেগুনের চাকন নই– আমি হুজুরের চাকর। আলু বেগুন আমার কিছুই করে দিবেনা, হুজুরই আমাকে চাকরি দিবেন, তাই হুজুরের মতটাই আমার মত।”
চলবে
(কবি ও সাংবাদিক)