[t4b-ticker]

শাবি প্রতিনিধি:

২০২৩ সাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ছিল অনেক অর্জনের। আবার এর পাশপাশি পূর্বের অনেক সংকটও সমাধান হয়নি। শিক্ষার্থীদের ছিল সহপাঠী হারানোর শোক। দাবি আদায়ে ছিল আন্দোলন আবার দলীয় স্বার্থ নিয়ে ছিল দ্বন্দ্বও।

 

 

 

ছাত্রলীগের যত কাণ্ড

গত ২৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন চায়ের দোকানে পায়ের ওপর পা তুলে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুমন মিয়ার সমর্থক ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রিশাদ ঠাকুর ও সংগঠনটির সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রব নাঈমের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে নাঈম মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন।

 

 

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পরবর্তীতে আবাসিক শাহপরাণ হলে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় সজীবুর রহমান এবং ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান স্বাধীনের সমর্থকরা। এ ঘটনায় একজন ছাত্রলীগ কর্মী গুরুতর আহত হন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে কোনো সমাধান না দিলে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে পাল্টপাল্টি মামলা করেন উভয়পক্ষ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তাকেও আসামী করা হয়। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সমাধান হয়নি বিষয়টি।

 

গত ১৬ আগস্ট ফেইসবুকে মন্তব্যের জেরে পিএমই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দুই ছাত্রকে সৈয়দ মুজতবা আলী হলে নির্যাতন করে হলছাড়া করার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ নেতা আজিজুল ইসলাম সীমান্তের বিরুদ্ধে। পরে গত ২ সেপ্টেম্বর নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজিজুল ইসলাম সীমান্তকে হল থেকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।

 

 

২০ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে রুমে ডেকে নিয়ে দলের কর্মী ও গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বাইজিদকে মারধরের ঘটনায় আরেক ছাত্রলীগ কমী ও ইংরেজী বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রিশাদ ঠাকুরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 

 

গত ৩১ আগস্ট সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বসাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সামনে সংঘর্ষে জাড়ায় ছাত্রলীগের খলিলুর রহমান ও উপদপ্তর বিষয়ক সম্পাদক সজীবুর রহমানের সমর্থকরা। এ ঘটনায় তিন ছাত্রলীগ কর্মী আহত হন।

 

গত ১৮ সেপ্টেম্বর শাহপরাণ হলে ক্যান্টিনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা শুভয়ের সঙ্গে হাতাহাতি হয় খলিলুর রহমানের সমর্থকের ও একপক্ষ আরেকপক্ষের কক্ষে ভাঙচুর চালায়। পরেরদিন নাজমুলকে হল থেকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।

 

 

গত ২০ নভেম্বর ইংরেজী বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সমর্থক ছাত্রলীগ কর্মী রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত সাকিব নিলয়কে শিবির অ্যাখ্যা দিয়ে শাহপরাণ হলে তার কক্ষে তালা দেন দলের খলিলুর রহমানের সমর্থকরা। পরবর্তীতে হল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ছাত্রলীগের তালা ভেঙ্গে সিলগালা করা হয় ওই কক্ষ। নিলয়কে করা হয় হলছাড়া।

 

 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সংঘর্ষ, নাশকতা ও শাস্তি 

 

এছাড়া র‌্যাগিং, যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চল্লিশের অধিক শিক্ষার্থীকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ১৬ জন শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। সহপাঠীকে মারধরের অভিযোগে এক ছাত্রকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।

 

 

গত ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে লোকপ্রশাসন বিভাগ ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এই ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন আহত হয়েছেন।

 

 

গত ১৬ জুন ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধ করার জেরে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ও সংঘর্ষে জড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়রা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ আহত হন অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী। গত ৩ আগস্ট মাদকের সংশ্লিষ্টতার কারণে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।

 

১৯ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে দুইদিনের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা মানববন্ধন ও অবস্থানকর্মসূচি করলে উপাচার্যের আশ্বাসে তা শেষ হয়।

 

 

এ ছাড়া ২৭ অক্টোবর সিলেটে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।

কর্তৃপক্ষ কি বলছে

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলার ও নিরাপত্তার বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড.মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী সিলেটভিউ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিদায়ী নিচ্ছে আরেকটি বছর। ২০২৪ সাল সমাগত। অনেক অর্জন আছে বিগত বছরে। ছোটকাটো কয়েকটি সমস্যা ছাড়া অর্জনই অনেক বেশি। শিক্ষার্থী নিয়মকানুন ও শৃঙ্খলার বিষয়ে অবগত না থাকায় বিভিন্ন সময় সমস্যা তৈরি হয়। নতুন বছরে সকল শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করবে। তাদের তারণ্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামের জন্য কজে লাগাবে, সম্ভাবনার নতুন দিগন্তকে তারা উন্মোচিত করবে। নেতিবাচক ধারণা ও কর্মকাণ্ডকে ছুড়ে ফেলে শিক্ষার্থীরা নতুন আবহে সবকিছু শুরু করবে এই প্রত্যাশা।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম শৃঙ্খলার ও নিরাপত্তাবিঘ্নিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা এমন কাজ থেকে দূরে থাকার আহ্বান করছি; বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধিতে ও সমগ্র নিয়ম নীতির প্রতি সকলেই শ্রদ্ধাশীল হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন প্রক্টর।