[t4b-ticker]
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী ও পাদুকা উৎসব মাহাত্ম্য

সুনির্মল সেনঃ

ত্রিকালদর্শী, পরমপুরুষ, মহাযোগী শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা’র দেহরক্ষা’র পরবর্তী সময়ে আসন গৃহে তাঁর বৃহৎ তৈলচিত্র প্রতিষ্ঠিত করা হয়।বাবা’র তৈলচিত্র (ফটো) এর সম্মুখভাগ তাঁর ব্যবহৃত পাদুকাযুগল নিত্য সেবার নিমিত্তে স্থাপন করা হয়।ব্রাহ্ম মুহূর্তে মন্দির খোলার পর হতেই আরম্ভ হয় বাবা’র প্রাত্যহিক সেবা,পূজা। এ সময় পৌরহিত্যগণ যথাসময়ে ও যথানিয়মে বাল্যভোগ নিবেদন করে থাকেন।প্রাত্যহিক সন্ধ্যা আরতির পর বাবা’র নাম সংকীর্তন শেষে শান্তিবারি, চরণামৃতও উপস্থিত ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়ে থাকে।

অর্ধ শতাব্দির অধিককাল প্রায় গত হতে চললো, ভক্তদের হ্রদয়ে এক স্মরণীয় ঘটনার কথা এখনো উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।সে সময়টা সম্ভবতঃ বাংলা ১৯৫৪–১৯৫৫ সন বা নিকটবর্তী সনের ১২ ই ফাল্গুন প্রত্যুষে ভক্তগণ জানতে পারলেন আসন গৃহে স্থাপিত বাবা লোকনাথের ব্যবহৃত কাষ্ঠ পাদুকা যুগল যাহা নিত্য পূজা-অর্চনা হয়ে থাকে।উহা বিগত দিবস ১১ই ফাল্গুন সন্ধ্যা আরতির সময় ধুপ্তি হতে জ্বলন্ত অঙ্গার নিক্ষিপ্ত হয়ে বেলভেট কাপড়ের উপর পড়ে। যার উপর বাবা’র পাদুকা যুগল স্থাপিত ছিলো।নিক্ষিপ্ত জ্বলন্ত অঙ্গারে বেলভেট কাপড় খানা আগুনে জ্বলে পাদুকা যুগল ভস্মিভূত করে ফেলে, কিন্তু বৌলা দু’খানা ভস্মিভূত হতে পারেনি।

এ ধরনের দুঃসংবাদ অচিরেই বায়ু বেগে গ্রাম থেকে গ্রামান্তর ছড়িয়ে পড়ে।নারায়নগন্জ বারদী ও তৎসন্নিকটবর্তী অন্চলের এবং কয়েক ক্রোশ দূরবর্তী গ্রামের আবাল বৃদ্ধ-বনিতা আশ্রম প্রাঙ্গনে আসিয়া জড়ো হতে থাকে।এ নিয়ে ভক্তগণের মন বিষন্ন এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। অনেক ভক্ত উক্ত ঘটনাকে সমাজের ভাবি অমঙ্গলের আশঙ্কায় বিশাদগ্রস্থ হন।কোন কোন মহিলা ভক্ত আসন ঘরের বারান্দায় দুগ্ধ ও জল ফেলে বাবা’র চরণ ধৌত করেন।

সে সময় বাবা’র আশ্রমে প্রধান পুরোহিত ছিলেন প্রয়াত শ্রী গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তী। ১১ই ফাল্গুন তারিখে অপর একজন পুরোহিত বাবা’র মন্দিরে ভোগ নিবেদন ও সন্ধ্যা আরতির কাজে নিযুক্ত ছিলেন।জানা যায়, তাঁর অসাবধানতায় এ ঘটনাটি ঘটে।
পাদুকা ভস্মিভূত হওয়া জনিত অমঙ্গলের আশঙ্কা দূরীকরণার্থে এ সময় খোল-করতাল সহ-যোগে যথারীতি নাম সংকীর্তনের আয়োজন করা হয়।সমস্ত দিনব্যাপী নাম সংকীর্তন চলতে থাকে এবং ভক্তগণের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এরপর থেকে দেশের লোকজন সকল প্রকার দুশ্চিন্তা ও বিষাদ হতে মুক্ত হন। এ ঘটনার পর হতেই প্রতি বছর ১২ই ফাল্গুন দিনটি উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।এই উৎসবই পরবর্তীকালে দেশবাসীর কাছে “পাদুকা উৎসব ” নামে পরিচিতি লাভ করে।

প্রথম দিকে কয়েক বছর বারদী ও তৎসন্নিকটবর্তী অন্চলে ভক্তগণ ও বিশেষ ভাবে নারায়নগন্জস্থ ব্যবসায়ী ভক্তগণের উৎসাহ ও সহযোগিতায় “পাদুকা উৎসব ” সম্পন্ন করা হতো।ক্রমে বছর অতিক্রান্ত হতে থাকলে পাদুকা উৎসব’র আয়োজন ও ভক্তসমাগম বাড়তে থাকে।
বর্তমান সময়ে “শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা’র পাদুকা উৎসব” এক বিশাল উৎসব এর আকার ধারণ করেছে।দেশের যেখানে “পাদুকা উৎসব” পালিত হয়, সেখানে দুর-দূরান্ত হতে নিজ ব্যবস্থাপনায় আগত ভক্ত সমাগমে মন্দির কিংবা আশ্রম ভূমি মূখরিত হয়ে উঠে।ভক্তগণ বাল্যভোগ ও রাজভোগের প্রসাদ গ্রহণ করে অপার আনন্দ লাভ করে থাকেন।

এভাবেই প্রতি বছর ১২ই ফাল্গুন “পাদুকা উৎসব” পালনের রীতি প্রচলন হয়।
প্রসঙ্গত,বর্তমানে সিলেটসহ সারাদেশব্যপী শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা’র বিভিন্ন আশ্রম ও মন্দিরে মহা-সমারোহে, বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনায় “পাদুকা উৎসব ” পালিত হচ্ছে।এই উৎসবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লোক সমাগমের উপস্থিতি লক্ষনীয়।
==============================
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বলেছেন—,
★ঈশ্বরই একমাত্র সদ্গুরু।আমার চরণ ধরিস না আচরণ ধর।
★যে ব্যক্তি প্রতিশ্রুতি দিয়েও দান করে না, আর যে ব্যক্তি দান করে তা ফিরিয়ে নেয়, তেমন ব্যক্তিদের যমের নিদারুণ পাশে বদ্ধ হতে হয়।
★তুই যত ক্ষমতা সম্পন্ন হস না কেন, সর্বদা আইনের মর্যাদা রক্ষা করবি। অাইনের সম্মান রক্ষা করলে মর্যাদাহানি হয় না।তাই তো আমি সরকারি বিধিব্যবস্থার উপযুক্ত সম্মান রক্ষার জন্যেই নারায়নগন্জ কোর্টে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলাম।
★ঈশ্বরের সৃষ্ট সকল জীবের জগতের জিনিসের উপর সমান অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারে তোরা কেউ যদি কাউকে বন্চিত করিস্, তাহলে তা হবে ঘোরতর অন্যায়।তা হবে অধার্মিকের অজ্ঞানের কাজ।
★ সৎ কর্মের অনুষ্ঠান করে যদি দুঃখ ভোগ করতে হয়, তবুও কায়মনোবাক্যে ঐ সৎ-কর্মের অনুষ্ঠানই করবি।
★অতি কঠোরবাক্য অন্যের মর্ম, অস্থি, হ্রদয় ও প্রাণ পর্যন্ত দগ্ধ করে।তাই অতি কঠোর ও মর্মভেদী বাক্য বলিস্ না।
★হিন্দুর ঈশ্বর সর্বভূতময়। তিনি সর্বভূতের অন্তরাত্মা। সকল জীবেই ঈশ্বর বিরাজ করছেন। জাগতিক প্রেম হিন্দুধর্মের মূল।অচ্ছেদ্য, অভিন্ন জাগতিক প্রেমেই হিন্দুত্বের প্রকাশ।অন্য কোন ধর্মে এমনটি দেখা যায় না।
★বিদ্যা, তপস্যা, ইন্দ্রিয়সংযম ও লোভ পরিত্যাগ ছাড়া কেউই শান্তি লাভ করতে পারে না।
★দানের চেয়ে উৎকৃষ্ট কর্ম, গর্ভধারিণীকে প্রতিপালন করার চেয়ে সৎকাজ, আর সন্নাসের চেয়ে উৎকৃষ্ট তপস্যা আর কিছু নেই।