[t4b-ticker]

মুসলিম নাকি হিন্দু? এই বিতর্কে মর্গে পড়ে আছে রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় নিহত এক তরুণীর লাশ। গ্রাম থেকে এসে তার বাবা দাবি করা এক ব্যক্তি বলছেন, মেয়েটির নাম বৃষ্টি খাতুন। তবে সহকর্মী ও পরিচিতরা বলছেন, লাশটি সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর। শুক্রবার বিকেল থেকে এই নিয়ে চলে পাল্টাপাল্টি দাবি।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সবুজ শেখ। আগুনে পুড়ে মারা গেছে তার মেয়ে বৃষ্টি খাতুন—এমন খবর কানে আসার পর কুষ্টিয়া থেকে ছুটে এসেছেন ঢাকায়। অজ্ঞাত পরিচয়ে পড়ে থাকা মেয়ের লাশ দেখে শনাক্ত করেন তিনি। সবুজ শেখ বলেন, তিনি ও তার মেয়েসহ পরিবার মুসলিম ধর্মাবলম্বী। সেই অনুযায়ী দেখান বৃষ্টির এনআইডি কার্ডের কপি।

তবে এরপরই বাঁধে বিপত্তি। লাশটি দেখে তার সহকর্মী ও পরিচিতরা দাবি করেন, নিহত তরুণীর নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। তিনি সনাতন ধর্মের অনুসারী। পূজার্চনায় নিয়মিত অংশ নিতেন রমনা কালীমন্দির ও ঢাকেশ্বরীতে। এই বিতর্কের সুরাহা করার চেষ্টা করেন নিহত তরুণীর বাবা দাবি করা সবুজ শেখ।

তবে অভিশ্রুতির সহকর্মীরা দাবি করছেন, তিনি দ্য রিপোর্ট অনলাইন পোর্টালের ইলেকশন কমিশন বিটের রিপোর্টার। এই নামেই সবাই চেনেন তাকে। অন্য একটি অফিসে যে সিভি পাঠিয়েছিলেন সেখানেও তার নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। তার সনাতন ধর্মাবলম্বী বাবা-মাকে খুঁজে বের করে তাদের হাতে লাশ বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি তাদের।

এদিকে সবুজ শেখ বলেন, আমার মেয়ের প্রকৃত নাম মোছা. বৃষ্টি খাতুন। সে আমাকে জানিয়েছিল- এমনিতে সে লেখালেখি করে ও হিন্দুদের সাথে চলাফেরা করে সেজন্য তাকে সবাই অভিশ্রুতি নামে ডাকে। আমি বলেছিলাম, এটা তো আমাদের নাম না। তোমার নাম বৃষ্টি, তুমি সে হিসেবে থাকবা।

তিনি বলেন, বৃষ্টি ইডেন কলেজের দর্শন বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। গত বছরই ওর পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে দুটি পরীক্ষা বাদ আছে। ওর রোল নম্বর-২৭৬। গত রাত থেকে ওকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। ওর মা চেষ্টা করছিল। আমিও চেষ্টা করেছি। আজ জোহরের নামাজ পড়ার পর ওর এক বান্ধবীর ফোনকল পাই। সে বলে- গতকালকের আগুনে অভিশ্রুতি মারা গেছে। আপনি দ্রুত আসেন। তারপরই আমি চলে এসেছি।

সবুজ শেখ আরও বলেন, অভিশ্রুতি আগে ফার্মগেটে থাকলেও কিছুদিন হলো সে এখানে এসে ওঠে। আর আমি থাকি আগারগাঁও, ব্যাচেলর মেসে।

‘আপনি কি প্রমাণ করতে পারবেন, সে আপনার মেয়ে?’, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সবুজ শেখ বলেন, আমি অবশ্যই পারব। ওর সাথে আমি আমার পরিবারের ছবি দেখাতে পারব। আমি আমার এলাকার চেয়ারম্যানের নম্বর দিচ্ছি, সেখানে কথা বলে দেখেন। আমার শ্যালক র‌্যাবে আছে, তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তা ছাড়া অন্যের মরা মেয়েকে আমি কেন নিয়ে যাব, নিয়ে কী করব?

বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের ২ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।