অনলাইন ডেস্ক :
সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল মাউন্ট এডোরার ভুল চিকিৎসায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তা সাহেদ আহমেদের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে এর বিচার চেয়ে মানববন্ধন করছেন সহকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মাউন্ট এডোরা হাসাপাতালের দিকে মানববন্ধনটি এগিয়ে যায়।
বর্তমানে হাসাপাতলের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি চলছে।
এতে সড়কের দুপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা, মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের রেজিষ্ট্রেশন বাতিলের দাবিও জানাচ্ছেন।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেছেন। এ সময় তাদের হাতে মাউন্ট এডোরার চিকিৎসকের বিচার দাবিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
প্ল্যাকার্ডের লেখা রয়েছে, চিকিৎসার নামে কসাইখানা বন্ধ কর করতে হবে, ‘ব্যবসা করবা করো ব্যবসা, রোগী ছেড়ে ধরো গরুর ব্যবসা, ডাক্তার তুমি মানুষ হও তুমি কিন্তু ব্যবসায়ী নও, বিচার চাই বিচার চাই মাউন্ট এডোরার বিচার চাই, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সাহা কামাল নাক কান কাটতে না পারলে তুমি গরুর ছাল কাটো, আর কত লাস চাও মাউন্ট এডোরা বলে দাও, মাউন্ট এডোরা কসাইখানা ইত্যাদি।
এর আগে সিলেট নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল মাউন্ড এডোরায় হাসপাতালের এঁদোয় নাকে ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সাহেদ আহমদের (৪০) মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। তার সহকর্মীদের অভিযোগ, ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাহেদের চিকিৎসায় কালক্ষেপণ করেছে। এজন্য তার মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে সাহেদের মৃত্যু হয় বলে জানান শাবির কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক অশোক বর্মন অসীম। সাহেদ আহমেদ শাবির নিরাপত্তা শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন।
অশোক বর্মন অসীম বলেন, প্রথমে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের চিকিৎসকের ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসার জন্য আমাদের সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
মাউন্ট এডারা কর্তৃপক্ষের কারণে আমাদের সহকর্মীর যে সমস্যা হয়েছে তাতে তার চিকিৎসা সহায়তা চেয়েছি, তাদের কাছে কোন ক্ষতিপূরণ চাইনি।
তবে তারা আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করেছে; কোন সদোত্তর দেয়নি। তারা আমাদের সাথে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক আচরণ করেছে। তাতেই আমাদের সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা মাউন্ট এডোরা কর্তৃপক্ষের বিচার চাই।
মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে যাতে এরকম ক্ষতির মধ্যে কেউ পতিত না হয়। আগামী বৃহস্পতিবার সহকর্মীর মৃত্যুতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করবে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানান, গত ডিসেম্বরে সিলেটের আখালিয়াস্থ মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান সাহেব আহমদ। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ কামাল কর্তৃক সাহেদের নাকে এন্ডোসকপিক সাইনাস অপারেশন করানো হয়। এর আগে একইদিন সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ মাহমুদ সাহেদকে সিস্টের অপারেশন করেন।
অপারেশনের পরেরদিন পেটের তীব্র ব্যাথা অনুভব করলে তাঁকে আলট্রাসনো ও স্লিপেস টেস্ট করানো হয়। পরে হাসপাতালের এমডি অধ্যাপক ডা. আক্তারুজ্জামান সাহেদের প্যানক্রিয়াটাইস লিক হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেন। ফলে একই সময় সাইনাস ও সিস্টের অপারেশনের ফলে সাহেদের একটি চোখ নষ্ট ও প্যানক্রিয়াস লিক হয়ে যায়; এতে অগ্নাশয়ের জটিল সমস্যায় পড়েন বলে অভিযোগ উঠে। পরে সাহেদের চিকিৎসা মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ৬ ডিসেম্বর তাকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।