অনলাইন ডেস্ক ঃ
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে শুরু হয়েছে সরকারি মূল্যে কৃষকের কাছ থেকে বোরো ধান সংগ্রহ। উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার কৃষক-কৃষাণী সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রির জন্য ‘কৃষকের অ্যাপ’ নামক অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন করেছিলেন। সব আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর অনলাইনে লটারির মাধ্যমে শনিবার (১৮ মে) সন্ধ্যায় উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দাপ্তরিক ফেসবুক আইডি ‘উপজেলা প্রশাসন আজমিরীগঞ্জ’ থেকে প্রথম পর্যায়ে ৬১৩ জন কৃষক-কৃষাণীর নামের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকা প্রকাশের পর থেকেই উপজেলার সাধারণ কৃষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। চলছে নানান আলোচনা ও সমালোচনা।
তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তালিকায় কৃষকের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের যে সমস্ত নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে তার অধিকাংশই সচল নয়।
সাধারণ কৃষকরা বলছেন, ঘরে ধান না থাকা কৃষকদের কার্ড ব্যবহার করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কয়েকটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে এই তালিকায় নাম বসিয়েছে। যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক যাচাই বাছাইয়ের কাজ করতেন, তবে প্রকৃত সাধারণ কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পেত।
উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটি ও কৃষি বিভাগ বলছে, অ্যাপসের মাধ্যমে যারা আবেদন করেছেন যাচাইয়ের পর তাদের মধ্য থেকে অনলাইনে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচিত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তারপরও ধান সংগ্রহের সময় যাদের নামে কার্ড তাদের স্ব-শরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। যাচাই করা হবে কৃষি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ মোবাইল ফোন নম্বর।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো সংগ্রহ মৌসুমে উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৮৯৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ৬১৩ জন কৃষক জনপ্রতি ৩ মেট্রিক টন ধান সরকারি মূল্যে খাদ্য গুদামে বিক্রি করতে পারবেন।
প্রকাশিত তালিকার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৬১৩ জন কৃষক-কৃষাণীর মধ্যে প্রায় ১৫৬ জন বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র কৃষাণীর নামে রয়েছে কৃষি কার্ড। তাদের অধিকাংশের কৃষি কার্ড থাকলেও তারা কখনোই ধান বিক্রি করেননি। মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের চক্রগুলো তাদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কৃষি কার্ড সংগ্রহ করে নিজেরাই সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করেন। তালিকায় থাকা বিভিন্ন কোম্পানির অন্তত ৪০টি মোবাইল ফোন নম্বরে কল দেওয়া হলে কোনটিই সচল নয় বলে জানায় মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম।
কৃষক আমিনুল মিয়া, সিদ্দিক আলী, আকছির মিয়াসহ একাধিক কৃষক বলেন, বহু টাকা খরচ করে জমিতে ধান ফলাই। সরকারি মূল্যে যদি ধান না দিতে পারি তাহলে লাভের পরিবর্তে লোকসান হয়। অনেক কৃষকই জানেন না এ বছর নিবন্ধন করতে হবে। তা ছাড়া উপজেলার প্রকৃত অনেক কৃষককে বাদ দিয়ে সিন্ডিকেট চক্র শুধু কার্ডধারী কৃষক-কৃষাণিদের নাম দিয়ে নিবন্ধন করেছে। এতে শতশত প্রকৃত কৃষকরা সরকার প্রদত্ত ধানের মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে বলেও জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ বলেন, অনলাইনে যে আবেদন জমা হয়েছে আমরা তা গ্রহণ করেছি। মোবাইল নম্বর আত্মীয় স্বজনের হতে পারে। তবে দেখার মূল বিষয় হচ্ছে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিক আছে কিনা এবং সেগুলো এই উপজেলার কিনা।
উপজেলা খাদ্য গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সামসুল হুদা বলেন, মোবাইল নম্বর যারই হউক আমরা ধান সংগ্রহ করবো কৃষকের কৃষি কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে। উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন, আবেদন যে কেউই করতে পারেন। লটারিতে আসার আগ পর্যন্ত কৃষি ও খাদ্য অধিদপ্তর থেকে আবেদনগুলো সঠিক আছে বলে আমাকে নিশ্চিত করার পর আমি আইডি থেকে লটারি সম্পন্ন করে তালিকা প্রকাশ করেছি। তারপরও যদি কেউ কোনো তথ্য গোপন করে থাকেন কিংবা বাছাইয়ের সময় পরেন নাই। যখন গুদামে ধান সংগ্রহ করা হবে তখন কৃষকের জাতীয় পরিচয়পত্র, কৃষি কার্ড ও মোবাইল ফোন নম্বর সঙ্গে নিতে হবে। সেটা আবার যাচাই হবে। যারা এগুলো না নিয়ে যাবেন তাদের কার্ড বাতিল বলে গণ্য হবে এবং যাদের আবেদন জমা আছে সেগুলো থেকে আবার লটারি হবে।