অনলাইন ডেস্কঃ
সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের ২১ দিনের আল্টিমেটাম শেষে ফের আন্দোলনে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাস।
একইসঙ্গে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে দেওয়া পরিপত্রের পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন।
পরে হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সেখান থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি কলা ভবন, শ্যাডো, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, ভিসি চত্বর হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ’ এর ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারজিস আলম বলেন, ‘২০১৮ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে বৈষম্যমূলক, নিপীড়নমূলক, নির্যাতনমূলক কোটা ব্যবস্থার কবর দেওয়া হয়েছিল। যখন প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে আপামর ছাত্র-জনতার কথা বিবেচনা করে কোটা বাতিল করেছিলেন, সেখানে হাইকোর্ট থেকে কীভাবে সেই পরিপত্র আবার বাতিল করা হয়? আজকে সারা দেশের ছাত্রসমাজ একযোগে আন্দোলন শুরু করেছে। এই কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বলা হয়েছিল ৪ জুলাই হাইকোর্ট থেকে ২০১৮ সালের ওই পরিপত্রের শুনানি দেওয়া হবে। তাই ৪ তারিখ পর্যন্ত আমাদের লাগাতার কর্মসূচি চলবে। ততদিন পর্যন্ত আমরা সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি।’
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, ‘২০১৮ সালে আমাদের যে আন্দোলন সে আন্দোলনের ফসলকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যেখানে উচিত ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকুরিতে কোটার একটি সুরাহা করা। কিন্তু দেখা গেল উল্টোটা হয়েছে। অবিলম্বে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে দেওয়া পরিপত্রের পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেরুন্নেসা হিমু বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এখন মাসে ২০ হাজার টাকা সম্মানী পাচ্ছে। সেইসব পরিবার কিভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার? যারা শিক্ষা, খাদ্য ও চিকিৎসায় পিছিয়ে আছে, পাহাড়ে বসবাস করে তারাই পিছিয়ে আছে। আজকে আমাদের আন্দোলন ভূণ্ডুল করার জন্য প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। আমরা নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধী। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধী না, আমরা চাই তারা তাদের অধিকার সম্মানের সাথে পেয়ে যাক। আমরা চাই কোটা নামের এই প্রহসন বন্ধ হোক। অন্যথায় ছাত্রসমাজ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।’
পরে শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুর আড়াইটায় গণ-পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এছাড়া সমাবেশ থেকে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে (সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে), সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফারহানা