[t4b-ticker]
অনলাইন ডেস্কঃ

 

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল কমার কারণে দেশের বন্যাকবলিত জেলাগুলোর বেশির ভাগেই নদ-নদীর পানি কমছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামার কারণে অনেক নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে। কোনো কোনো এলাকায় তীব্র স্রোতে রাস্তাঘাট ও সেতু ভেঙে চরাঞ্চল ও নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ যাচ্ছে না।

 

দেশের বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

রংপুর : তীব্র স্রোতে তিস্তা নদীতীরবর্তী মর্ণেয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়া এলাকার একটি পাকা সড়ক ও একটি সেতু ভেঙে গেছে। এর ফলে আলফাজটারী, শেখটারী, ভাঙ্গাগড়া, চর মর্ণেয়া মিলারপাড়া, নরসিং গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। পাকা সড়ক ও ফসলি জমি ভেঙে যাচ্ছে।

 

মর্ণেয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান জানান, তাঁর ইউনিয়নেই ৩৫টি বাড়ি ও কিছু দোকানপাট নদীগর্ভে চলে গেছে।

কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি গতকাল বিকেলেও বিপৎসীমার ওপরে ছিল। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই তিনটি নদীর পানি ধীরগতিতে কমতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত দুই দিনে নাগেশ্বরী উপজেলার তিনটি স্থানে বাঁধ ও সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

 

নতুন করে পানি প্রবেশ করেছে পৌর এলাকার তিনটি ওয়ার্ডে। সদর উপজেলার বাংটুরঘাট এলাকায় একটি স্পারের ১০ ফুট অংশ ধসে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত সাত হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির ফসল বন্যায় ডুবে গেছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯টি উপজেলার এক লাখ ৩৬ হাজার মানুষ।

লালমনিরহাট : তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি উপচে জলমগ্ন নিম্নাঞ্চলগুলোর পরিস্থিতি গতকাল সোমবার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

তবে অনেক বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে এখনো পানি রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, ডাউয়াবাড়ী, গড্ডিমারী ও সিন্দুর্ণা, আদিতমারীর মহিষখোচা এবং সদর  উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

টাঙ্গাইল : পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, জেলার প্রায় সব কটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা, ঝিনাই ও ধলেশ্বরীর পানি সামান্য কমলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, সদর ও নাগরপুর উপজেলার ৩৬ হাজার মানুষ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, হাট-বাজার ও ফসলি জমি। সদর ও নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।

মির্জাপুর, বাসাইল ও দেলদুয়ার উপজেলায়ও বন্যা আগ্রাসী হাতছানি দিচ্ছে। সড়ক ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা ও নিকরাইল ইউনিয়নের ১২-১৪টি গ্রামসহ পুরো চরাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় চরকয়েড়া, কয়েড়া, আকালু, নলুয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।

শেরপুর : গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদে ২২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। সদর উপজেলার চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের কুলুরচর-বেপারীপাড়া এলাকার নতুন চরের প্রায় ৪০০ বাড়িতে পানি ওঠার কারণে তারা পাশের জামালপুর শহরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। সতাছাড়া ভাগলগড় এলাকায় নদীভাঙনের ফলে ১০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে আরো অর্ধশতাধিক পরিবারের ভিটামাটি। অনেকেই বাড়িঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। চরপক্ষিমারী ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী এ কথা জানিয়েছেন। কামারেরচর ইউনিয়নেও ৬ ও ৭ নম্বর চরে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলে চারটি পরিবারের ঘরবাড়ি ধসে গেছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে।

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : বন্যার পানি কিছুটা কমলেও এখনো বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে আছে। উপজেলার ৭৭টি গ্রামে এখনো পানি আছে। পানিবন্দি হয়ে আছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : গতকাল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় আট সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে নদী তীরবর্তী দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া, উজানচর ও ছোটভাকলা ইউনিয়নে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন গ্রামের মানুষ খেয়া নৌকায় যাতায়াত করছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের গেজ রিডার সালমা খাতুন জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সোমবার রাতের মধ্যে গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশুসহ দুজন মারা গেছে। গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটেছে।

নিহতরা হলো উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের আদ্রা গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে ইয়াসিন মিয়া ও পৌরসভার কামরাবাদ গ্রামের মৃত জমশের আলীর ছেলে শাহা আলী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে বাড়ির পাশে ঝিনাই নদে গোসল করতে যান শাহা আলী। এ সময় বন্যার পানির স্রোতে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন তিনি। এর কয়েক ঘণ্টা তাঁর লাশ নদীতে ভেসে ওঠে।

অন্যদিকে গতকাল দুপুরে বাড়ির পাশের ডোবায় বন্যার পানিতে পড়ে নিখোঁজ হয় ইয়াসিন। এরপর খোঁজাখুঁজি করে তার লাশ পাওয়া যায়।

(AR)